কুয়াকাটা ভ্রমণের স্মরণীয় অভিজ্ঞতা
আরমান রশীদ
১১ জানুয়ারি ২০২১, এটি ছিল আমাদের ক্রিকেট ক্লাবের জন্য এক স্মরণীয় দিন। ১৫ জন খেলোয়াড় ও আমাদের কোচ খুলনা থেকে ঝালকাঠির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি, আমাদের লক্ষ্য ছিল ঝালকাঠি জেলা স্টেডিয়াম ও বরিশাল বিভাগীয় স্টেডিয়ামে ৪টি ক্রিকেট ম্যাচ খেলা। থাকার জন্য আমাদের দলের একজন খেলোয়াড়ের বাড়ি নির্ধারিত হয়েছিল।
খেলা যথাসময়ে শুরু হয়, এবং ১৫ জানুয়ারি বরিশালে শেষ ম্যাচটি খেলে আমরা ঝালকাঠিতে ফিরে আসি। তবে, তখনও আমরা জানতাম না যে আমাদের সামনে অপেক্ষা করছে আরও একটি চমকপ্রদ অভিজ্ঞতা।
অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত ও নতুন যাত্রা
শীতের সন্ধ্যায় আমরা সবাই ফ্রেশ হয়ে একত্রিত হই। হঠাৎ আমাদের মনে এলো—বরিশাল পর্যন্ত এসে যখন পড়েছি, তখন কুয়াকাটা কেন বাদ থাকবে? প্রথমে কোচ যেতে অনিচ্ছা প্রকাশ করলেও, আমাদের অনুরোধে তিনি রাজি হলেন। মুহূর্তের মধ্যেই আমরা একটি গাড়ি ঠিক করলাম, যার ভাড়া পড়ল ১২ হাজার টাকা। রাত ৮টায় আমরা রোমাঞ্চকর এক অভিযানে রওনা দিলাম।
অজানা গন্তব্যে পা রাখা
রাতের পথ ধরে দীর্ঘ যাত্রার পর সকাল ৮টায় আমরা কুয়াকাটা পৌঁছাই। সৈকতের ছোঁয়া পাওয়ার আগেই আমাদের আরেকটি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়—দুপুর ২:৩০-এর দিকে প্রায় সব হোটেল বুক হয়ে গিয়েছিল! তবে আমাদের কোচের অভিজ্ঞতা কাজে এলো, তিনি আগেও এসেছিলেন এবং একটি পরিচিত হোটেলের নম্বর সংগ্রহে রেখেছিলেন। ফোন করার পর হোটেলের কর্মচারীরা এসে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করে দেয়।
যদিও সবাই দীর্ঘ যাত্রায় ক্লান্ত ছিল, কিন্তু উত্তেজনার কারণে কেউ ঘুমাতে পারেনি। সবাই ছিল একটাই আবেগে উদ্বেলিত—ভোরে সৈকতে গিয়ে সূর্যোদয় দেখার ইচ্ছায়।
প্রকৃতির এক অসাধারণ মুহূর্ত
ভোরবেলা আমরা সৈকতের পথে ছুটলাম। ঠান্ডা বাতাস শরীর ছুঁয়ে যাচ্ছিল, আর ঢেউয়ের শব্দ যেন এক অন্যরকম সুর তুলছিল। ১৬ জানুয়ারি সূর্যোদয় ৫:৪৩-এ হওয়ার কথা ছিল, তাই সৈকতে প্রচুর দর্শনার্থীর ভিড় ছিল। আমরা মোবাইল হাতে নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলাম।
ধীরে ধীরে সমুদ্রের গহীন থেকে সূর্যের লাল আভা ফুটে উঠল। সেই মুহূর্তটি যেন স্বপ্নের মতো! কয়েক মুহূর্তের মধ্যে গাঢ় লাল থেকে কমলা আভা ছড়িয়ে পড়ল আকাশে, আর ঢেউগুলো যেন স্বর্ণালি রঙ ধারণ করল। সবাই মোবাইল ক্যামেরায় সেই মোহনীয় দৃশ্য বন্দি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এ এক অনন্য অনুভূতি, যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
সমুদ্রের বুকে আনন্দোৎসব
সূর্যোদয়ের পর সকালের নাস্তা সেরে, আমরা সাগরের ঢেউয়ের সাথে মেতে উঠলাম। উত্তাল জলরাশি আমাদের আনন্দের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আমরা পানিতে খেলাধুলা করলাম, হাসলাম, দৌড়ালাম। আমাদের কোচ স্যার এই বিশেষ মুহূর্তগুলো ভিডিও করে রাখলেন, যা আমাদের জন্য এক অমূল্য স্মৃতি হয়ে থাকবে।
এরপর আমরা সৈকত থেকে কিছু ঝিনুক সংগ্রহ করি। হঠাৎ দেখি, একটি সামুদ্রিক মাছ ঢেউয়ের ধাক্কায় তীরের বালিতে আটকে পড়েছে। এক স্থানীয় লোক দ্রুত সেটি ধরে ফেলে। জানতে পারলাম, মাঝেমধ্যে এভাবেই মাছগুলো সৈকতে চলে আসে, আর স্থানীয়রা সেগুলো সংগ্রহ করে নেয়।
বিদায় কুয়াকাটা
সময় যেন আমাদের জন্য থমকে গিয়েছিল, কিন্তু বাস্তবতা আমাদের ফিরিয়ে আনল। দুপুর ১২টায় আমরা হোটেলে ফিরে প্রস্তুতি নিলাম। গাড়ি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। বিদায়বেলায় সৈকতের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছিল, যেন এখান থেকে যেতে মন চাইছে না! কিন্তু আমাদের ফিরতেই হতো।
ঝালকাঠিতে পৌঁছে ব্যাগ সংগ্রহ করে আমরা খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম এবং রাত ৯টার মধ্যে বাড়ি পৌঁছে গেলাম। কুয়াকাটার এই অপ্রত্যাশিত ভ্রমণ আমাদের জীবনের অন্যতম স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।
আমরা শুধু ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে গিয়েছিলাম, কিন্তু ফিরলাম একগুচ্ছ অমূল্য স্মৃতি নিয়ে—যা আজীবন আমাদের হৃদয়ে জায়গা করে থাকবে।
2 comments:
It would be wrong to call it a travel story, you could call it a kind of adventure story.🥰🥰
Best moment it was..
Post a Comment