Sunday, 30 March 2025

ঈদের খুশি


 ঈদের খুশি

 আরমান রশীদ 


চাঁদ উঠেছে আকাশ জুড়ে,

আনন্দ ঝরছে ঘরে ঘরে।

সাজো সাজো নতুন করে,

ঈদ এসেছে দ্বারে দ্বারে!


মিষ্টি খাবার, নতুন জামা,

হাঁশি-ঠাট্টার নেই কো মানা!

সবার মুখে খুশির রঙ,

ঈদ মানে যে ভালোবাসার ঢঙ।


গরিব-দুঃখী ভুলবে না,

ভালোবাসা ছড়িয়ে দে না!

মিলে মিশে সবাই থাকি,

ঈদ মোবারক, খুশি রাখি!

Wednesday, 26 March 2025

ঝিঝি পোকার গান


 

ঝিঝি পোকার গান 

আরমান রশীদ

ঝিঝি পোকার ডাক শুনে,
জেগে ওঠে মাঠ-বনে।
গাছের পাতায় ঝিমিয়ে থাকে,
গান শোনায় আপন মনে।

ঝিঁ ঝিঁ ঝিঁ… ডাকতে থাকে,
বাতাস আসে দুলে দুলে।
সন্ধ্যা হলে রাতের কোলে,
মিশে যায় সে ফুলের গলে।

চাঁদের আলো, শিশির রাতে,
গান শোনায় মনের সাথে।
ঝিঝি পোকার মিষ্টি সুরে,
ঘুমিয়ে পড়ে সারা পুরে।

Thursday, 20 March 2025

নদীর সঙ্গী


  নদীর সঙ্গী 

 আরমান রশীদ 


নদীর পাড়ে বসে আছি,

শুধু আমি আর নদী,

হাত বাড়ালেই যেন ছুঁতে পারি

তার বয়ে চলার গতি।


নৌকোগুলো পাল তুলেছে,

দূরে কোথাও হারায়,

মাঝিরা গেয়ে ওঠে গান,

ঢেউয়ের সাথে মিলায়।


নদীর জলে রোদ মিশে যায়,

রঙ বদলায় আকাশ,

সন্ধ্যা নামে ধীরে ধীরে,

চারপাশ হয়ে যায় উদাস।


একটা পাখি ডেকে ওঠে,

বিদায়ের সুর গায়,

হাওয়া বয়ে যায় ধীরে ধীরে,

আমার মনও ভাসায়।


চারদিকে জনশূন্য এখন,

শুধু আমি একা বসে,

নদী আমায় কাছে টানে,

নীরবতার কথা বলে…

Tuesday, 18 March 2025

কুয়াকাটা ভ্রমণের স্মরণীয় অভিজ্ঞতা

 কুয়াকাটা ভ্রমণের স্মরণীয় অভিজ্ঞতা

                আরমান রশীদ 

১১ জানুয়ারি ২০২১, এটি ছিল আমাদের ক্রিকেট ক্লাবের জন্য এক স্মরণীয় দিন। ১৫ জন খেলোয়াড় ও আমাদের কোচ খুলনা থেকে ঝালকাঠির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি, আমাদের লক্ষ্য ছিল ঝালকাঠি জেলা স্টেডিয়াম ও বরিশাল বিভাগীয় স্টেডিয়ামে ৪টি ক্রিকেট ম্যাচ খেলা। থাকার জন্য আমাদের দলের একজন খেলোয়াড়ের বাড়ি নির্ধারিত হয়েছিল।

খেলা যথাসময়ে শুরু হয়, এবং ১৫ জানুয়ারি বরিশালে শেষ ম্যাচটি খেলে আমরা ঝালকাঠিতে ফিরে আসি। তবে, তখনও আমরা জানতাম না যে আমাদের সামনে অপেক্ষা করছে আরও একটি চমকপ্রদ অভিজ্ঞতা।

অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত ও নতুন যাত্রা

শীতের সন্ধ্যায় আমরা সবাই ফ্রেশ হয়ে একত্রিত হই। হঠাৎ আমাদের মনে এলো—বরিশাল পর্যন্ত এসে যখন পড়েছি, তখন কুয়াকাটা কেন বাদ থাকবে? প্রথমে কোচ যেতে অনিচ্ছা প্রকাশ করলেও, আমাদের অনুরোধে তিনি রাজি হলেন। মুহূর্তের মধ্যেই আমরা একটি গাড়ি ঠিক করলাম, যার ভাড়া পড়ল ১২ হাজার টাকা। রাত ৮টায় আমরা রোমাঞ্চকর এক অভিযানে রওনা দিলাম।

অজানা গন্তব্যে পা রাখা

রাতের পথ ধরে দীর্ঘ যাত্রার পর সকাল ৮টায় আমরা কুয়াকাটা পৌঁছাই। সৈকতের ছোঁয়া পাওয়ার আগেই আমাদের আরেকটি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়—দুপুর ২:৩০-এর দিকে প্রায় সব হোটেল বুক হয়ে গিয়েছিল! তবে আমাদের কোচের অভিজ্ঞতা কাজে এলো, তিনি আগেও এসেছিলেন এবং একটি পরিচিত হোটেলের নম্বর সংগ্রহে রেখেছিলেন। ফোন করার পর হোটেলের কর্মচারীরা এসে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করে দেয়।

যদিও সবাই দীর্ঘ যাত্রায় ক্লান্ত ছিল, কিন্তু উত্তেজনার কারণে কেউ ঘুমাতে পারেনি। সবাই ছিল একটাই আবেগে উদ্বেলিত—ভোরে সৈকতে গিয়ে সূর্যোদয় দেখার ইচ্ছায়।

প্রকৃতির এক অসাধারণ মুহূর্ত

ভোরবেলা আমরা সৈকতের পথে ছুটলাম। ঠান্ডা বাতাস শরীর ছুঁয়ে যাচ্ছিল, আর ঢেউয়ের শব্দ যেন এক অন্যরকম সুর তুলছিল। ১৬ জানুয়ারি সূর্যোদয় ৫:৪৩-এ হওয়ার কথা ছিল, তাই সৈকতে প্রচুর দর্শনার্থীর ভিড় ছিল। আমরা মোবাইল হাতে নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলাম।

ধীরে ধীরে সমুদ্রের গহীন থেকে সূর্যের লাল আভা ফুটে উঠল। সেই মুহূর্তটি যেন স্বপ্নের মতো! কয়েক মুহূর্তের মধ্যে গাঢ় লাল থেকে কমলা আভা ছড়িয়ে পড়ল আকাশে, আর ঢেউগুলো যেন স্বর্ণালি রঙ ধারণ করল। সবাই মোবাইল ক্যামেরায় সেই মোহনীয় দৃশ্য বন্দি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এ এক অনন্য অনুভূতি, যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।

সমুদ্রের বুকে আনন্দোৎসব

সূর্যোদয়ের পর সকালের নাস্তা সেরে, আমরা সাগরের ঢেউয়ের সাথে মেতে উঠলাম। উত্তাল জলরাশি আমাদের আনন্দের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আমরা পানিতে খেলাধুলা করলাম, হাসলাম, দৌড়ালাম। আমাদের কোচ স্যার এই বিশেষ মুহূর্তগুলো ভিডিও করে রাখলেন, যা আমাদের জন্য এক অমূল্য স্মৃতি হয়ে থাকবে।

এরপর আমরা সৈকত থেকে কিছু ঝিনুক সংগ্রহ করি। হঠাৎ দেখি, একটি সামুদ্রিক মাছ ঢেউয়ের ধাক্কায় তীরের বালিতে আটকে পড়েছে। এক স্থানীয় লোক দ্রুত সেটি ধরে ফেলে। জানতে পারলাম, মাঝেমধ্যে এভাবেই মাছগুলো সৈকতে চলে আসে, আর স্থানীয়রা সেগুলো সংগ্রহ করে নেয়।

বিদায় কুয়াকাটা

সময় যেন আমাদের জন্য থমকে গিয়েছিল, কিন্তু বাস্তবতা আমাদের ফিরিয়ে আনল। দুপুর ১২টায় আমরা হোটেলে ফিরে প্রস্তুতি নিলাম। গাড়ি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। বিদায়বেলায় সৈকতের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছিল, যেন এখান থেকে যেতে মন চাইছে না! কিন্তু আমাদের ফিরতেই হতো।

ঝালকাঠিতে পৌঁছে ব্যাগ সংগ্রহ করে আমরা খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম এবং রাত ৯টার মধ্যে বাড়ি পৌঁছে গেলাম। কুয়াকাটার এই অপ্রত্যাশিত ভ্রমণ আমাদের জীবনের অন্যতম স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।

আমরা শুধু ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে গিয়েছিলাম, কিন্তু ফিরলাম একগুচ্ছ অমূল্য স্মৃতি নিয়ে—যা আজীবন আমাদের হৃদয়ে জায়গা করে থাকবে।

Friday, 14 March 2025

ভালোবাসি

   ভালোবাসি
আরমান রশীদ 

চুপি চুপি বলছি তোমায়, 
কাউকে না।

এতো সুন্দর লাগছে তোমায়, 
হয়না তুলনা।

কি সুন্দর ঠোট তোমার, 
কি সুন্দর আঁখি।

যে দেখবে সেই বলবে, 
আমি তোমায় ভালোবাসি।

চলতে চলতে ভাবি শুধু,
তোমার কথা।

হৃদয় জুড়ে বাজে যেন,
তোমার ব্যথা।

তুমি হাসলে ঝরে পরে,
চাঁদের আলো।

তোমায় পেয়ে জীবন আমার,
হয়ে গেল ভালো।

মনের কথা

   মনের কথা
আরমান রশীদ 

পথ হারা পাখি আমি,
একা একা বসে থাকি।
নিরবে বসে বসে আমি,
তোমার কথা ভাবি।

অচিন পাখি উড়ে যায়,
মেঘের ঐ আড়ালে।
তুমি ও কি খুশি হবে,
আমাকে হারালে?

তোমার ছোঁয়া পাই না আর,
স্বপ্ন জুড়ে থাকি।
স্মৃতির ধোঁয়ায় ভরে ওঠে,
নিঃশ্বাস আমার একাকী।

চোখে মেঘ, মনে রাত,
চাঁদও যেন কাঁদে।
তোমার কথা ভাবতে গিয়ে,
হৃদয় ভেঙে যায় রাঁধে।

তোমার হাসি ভেসে আসে,
নীরবতা ভেদ করে।
জানিনা কেন ভালোবেসে,
হারিয়ে যাই তব রঙে।

হায়রে গরম

  হায়রে গরম
আরমান রশীদ 

হায়রে গরম—
শরীরটা করলি নরম।
কারেন্টের যা ধরন,
বলতে লাগে শরম।

ঝরছে ঘাম, কমছে পানি,
বৃষ্টি হবে কখন জানি?
দিনের রোদে ধরল মাথা,
কেউ ছিল না ধরতে ছাতা।

কষ্টের নেই শেষ,
হায়রে আমার দেশ।
ঘরের ভিতর গরম চেপে,
বাইরে বাতাস কেন এতো খেপে?

মেঘ ছিঁড়ে কোথায় চলে গেছে,
বৃষ্টি মিসে গেল বলে কি?
পানির দামে ভোগান্তি,
থেমে যাওয়া পথের অগাধ রহস্য।

রাতের তাপ থেকে তপ্ত,
ঘুম আসে না ভেবে যত্ন।
ভালো নেই মনটা,
মনকে লাগছে এক দফা গরম।

তবুও ভালোবাসি এই দেশ,
যেখানে গরম হয় কম,
এখানে বসে বসে ছায়া নিয়ে,
প্রকৃতির মাঝে ঠান্ডা হাওয়া পাই না কম।

বৃষ্টির পর বিকেলে বেড়াতে যাবো,
গরম হলেও মনের স্বপ্ন দেখবো।
তবে এই গরম ছেলেকে কাছে না আনলে,
ভাগ্যতো জোড় না পাবে, কেমন বলো?

মা

         মা
আরমান রশীদ 

মা তোমাকে ভালোবাসি। 

তোমার মুখে চাঁদের হাসি -
মা আমি তোমাকেই ভালোবাসি।

মাগো তুমি কষ্ট পেলে -
আমার মন কষ্টে মরে।

মাগো তুমি যেওনা ছেড়ে, 
আমায় একা দূরে ফেলে।

যদি তুমি যাওগো দূরে, 
আমি তবে যাবো মরে।

তুমি ছাড়া শূন্য লাগে,
সবই যেন মিছে বলে।

তোমার আঁচল ছুঁয়ে মাগো,
পাই যে শান্তির ছোঁয়া।

তোমার কোলে ঘুমিয়ে পড়লে,
ভয়ও যেন যায় হারিয়ে।

তুমি কাছে থাকলে মাগো,
দুঃখ কষ্ট সবই সারে।

তোমার মুখের ডাক শুনে মা,
মনটা আমার যায় যে ভরে।

তোমায় ছাড়া কিছু চাই না,
তুমি আমার পৃথিবী মা।

শীতের পাখি

 শীতের পাখি
আরমান রশীদ 

আসছে উড়ে শীতের পাখি,
স্বপ্ন নিয়ে মেলে আঁখি।
দূর আকাশে ভেসে আসে,
আনন্দে নাচে বুকের বা-পাশে।

নীল আকাশে ডানা মেলে,
হাওয়ার তালে দুলে দুলে।
কখনো তারা গোল হয়ে ওড়ে,
কখনো বা একাকী চড়ে।

পদ্মা বিলে জল ঝিলমিল,
তাদের খেলা দুপুর বিলি।
পুকুর, নদী, খালে-বিলে,
জমে ওঠে ওদের মেলা সবে মিলে।

সুন্দর সেই সাদা গলায়,
বাঁশির মতো ডাক শোনায়।
পাখিদের ডাকে ঘুম ভাঙে,
শীতের সকাল আরো রাঙে।

হাজার পাখি আসে চলে,
নতুন গল্প তুলে তোলে।
কেউ নামে জল ঠেলে খেতে,
কেউ থাকে ঘাসে বসে রেতে।

বাচ্চারা দৌড়ায় ক্যামেরা নিয়ে,
মুখে হাসি, চোখে আলো দিয়ে।
পাখিদের ছায়ায় ছবি আঁকে,
মনের পাতায় স্বপ্ন রাখে।

তবে কিছু লোভী আসে গোপনে,
বাঁধে ফাঁদ সেই প্রকৃতিপূজনে।
তাই বলি সবাই মিলে,
এসো পাখি বাঁচাই সজীব কিলে।

ওরা অতিথি, আসুক ফিরে,
শীত গেলে যাক তারা স্নিগ্ধ ভোরে।
আসুক বারেবারে পাখিরা উড়ে,
আমরা থাকি তাদের রক্ষায় জুড়ে।

Thursday, 13 March 2025

বর্ষা-১

      বর্ষা-১
আরমান রশীদ 

আকাশ পানে কী দেখা যায়,
এলো কি কালো ভূত?
মেঘদল আজ নেমেছে মাঠে,
পাল্লা দিচ্ছে রীতিমতো রুট।

মেঘেদের সেই আনাগোনা,
বুকের ভিতর বাজে সুর,
মাঝে মাঝে যাচ্ছে শোনা—
বজ্র যেন গলায় গুরগুর।

আকাশ ভেঙ্গে পড়বে বুঝি,
চমকে যায় গাছের শাখা,
ছাতার নিচে দৌড় ঝাঁপে
শহরের সব ব্যস্ত লোকেরা।

পুকুরে নামে জলের দল,
ডোবা-নালা ভরে উঠে,
ছোট্ট শিশুর চোখে দেখা
বর্ষার গল্প বৃষ্টির মূখে।

কাদায় লেপ্টে পা চলে না,
জুতো ঘরে রেখে দেয়,
টিনের চালে বৃষ্টির সুরে
মনের ভেতর গান বাজে।

চায়ের দোকান ঠাসা লোকে,
হাতে ধরা ধোঁয়া চা,
বৃষ্টি থামুক, এই সে চাওয়া—
তবু মন চায় থাক বর্ষা।

বর্ষার রাজপথ

বর্ষার রাজপথ
আরমান রশীদ 

রাজধানীর রাজপথ ভিজে গেছে কাদা জলে,
ছাতা মাথায় মানুষ হাঁটে ধীরে ধীরে ভুল চলে।
টিপটিপ বৃষ্টি পড়ে, থামে না একটুও,
ঝুমঝুম করে নামে, গুমোট লাগে বুকে খুব।

রাস্তাঘাটে হাটুপানি, চলে গাড়ি গড়গড়,
পানির নিচে ঢেকে গেছে, ফুটপাত, রাস্তার চর।
নর্দমা ছুঁয়ে জলের ঢেউ এসে পড়ে পায়ে,
এই শহরের প্রতিটা কোণ — জলে, ময়লায় ছায়ে।

ময়লা ভেসে আসে ক্যানেলে,
প্লাস্টিক বোতল, খাবারের থালা,
জলাশয়ের মতো রাজপথ—
যেন নগরজুড়ে মলিন কাব্যশালা।

জীবাণুরা হাসছে যেন,
ছোটে স্রোতের মতো দলে দলে,
মানুষ বাঁচে নাকে রুমাল দিয়ে,
মুখে অভ্যাস হয়ে গেছে গন্ধ জলে।

ট্রাফিক থেমে গেছে বহুক্ষণ,
কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ ডুবে চিন্তায়,
কারও পায়ের জুতো ভেসে গেছে,
কেউ খুঁজে ফেরে আকাশে রংধনু তাই।

ছোটরা নেমে যায় ছাদ থেকে নিচে,
কাদায় খেলতে, পা দিয়ে দিচ্ছে নাচে।
বড়রা দেখে জানালা দিয়ে,
দুশ্চিন্তার মেঘ মুখে ছায়া রেখে।

এই শহরে বর্ষা মানেই যুদ্ধ,
জল নিয়ে নয়, টিকে থাকার।
বর্ষা মানেই জমে থাকা জলে,
একদিনের ব্যথা, আরেকদিন আবার।

থাম থাম বর্ষা, একটু বিশ্রাম নে,
আকাশে আবার রোদ উঠুক,
রংধনু দেখা যাক ঠিকঠাক করে,
কালো মেঘ এবার বাড়ি ফিরুক।

মা মেঘের কান্না

মা মেঘের কান্না
আরমান রশীদ 

বৈশাখ মাসের কষ্ট নিয়ে -
মেঘ ডাকছে আমার বুকে, 
বোনটি আমার হারিয়ে গেছে -
ডেকে উঠছে আমার বুকে।

প্রতি বছর বোনটি আমার -
হারিয়ে যায় অনেক দূরে,
জায়নামাযে মা বসে -
কাঁদছে সে করুন সুরে।

মেঘের পথ চিনে যদি -
বোনটি আসে ফিরে, 
মা বলেছে মিলাদ দেবে -
আমন ধানের ক্ষীরে।

বর্ষা-২

      বর্ষা-২
আরমান রশীদ 

মেঘ, মেঘ মেঘমালা -
জল জলরাশি,
প্রভাত থেকে দেখিনি আজ,
সুয্যিমামার হাঁসি।

নদী-নালা ভরছে সে আজ -
কিনারায় কিনারায়,
গাছপালা সব পড়ছে শুয়ে -
বাতাসের ইশারায়।

ঢাকছে গরু মাচ্ছে শোনা,
পখির কলরব,
এদিক-ওদিক, উতাল-পাতাল -
ছুটছে যেন সব।

গুডুম-গুঞ্জুম মেঘের আওয়াজ -
বিদ্যুৎ ঝলকানি,
দিচ্ছে জানান সকলেরে -
আসলে ঋতুর রানী।

নতুন বছর নতুন জীবন

নতুন বছর নতুন জীবন
      আরমান রশীদ 

জীবন থেকে একটি বছর —
যখন গেল চলে,
নতুন দিনের নতুন পুস্তক —
নিলাম গ্রহণ করে।

লাভ-ক্ষতির হিসাব করে —
দেখছি জীবন খাতায়,
শূন্যে আমি করছি বাস —
পাপের বোঝা মাথায়।

নতুন দিনের নতুন আলো —
জাগালো মনে আশা,
অতীত সব দূরে থাক —
মনের আশা বেঁচে থাক।

জীবন গড়ার শপথ নিলাম —
আবার নতুন করে,
জীবনের সব সফলতা —
আনন্দ স্রোতে ভাসে।

বছরটি হোক কর্মময় —
ভালোবাসায় ভরা,
ভুলগুলো হোক শুধরানো —
আলোকিত হোক ধরা।

সত্যি-মিথ্যা চিনে নিয়ে —
পথ চলি নির্ভয়ে,
আশার আলো জ্বালি মনে —
তোমার আমার জয়গনে। 

নতুন স্বপ্ন আঁকি এবার —
নতুন গানের সুরে,
নতুন বছর নতুন জীবন —
চলো গড়ি হাতে ধরে।

সব ব্যথাকে করি বিদায় —
বুকে রাখি সাহস,
নতুন সূর্য উঠবে এবার —
দুঃখ মুছে হটাও।

প্রতিজ্ঞা করি এ হৃদয়ে —
হার না মানার গান,
চলো এগিয়ে চলি এবার —
স্বপ্ন জয়ের পানে প্রাণ।

মাতৃভাষা

  
  মাতৃভাষা
আরমান রশীদ 


ফেব্রুয়ারি এলেই শহীদ মিনার জেগে ওঠে,
লাল-সাদা ফুলে ঢেকে যায় সিঁড়ির ধাপগুলো।
শিশুরা হাতে ফুল ধরে দাঁড়ায়,
বড়রা চোখের কোণে জল নিয়ে গান গায়—
"আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি…"

এই গানটা শুনলেই বুকটা কেঁপে ওঠে।
মনে হয়, আমি সেই ভিড়ের মধ্যে এক শিশু,
যে ভাষার জন্য বুক ফুলিয়ে দাঁড়ায়।
কিন্তু মা, আমি ভাবি,
ভাষার জন্য কেবল একদিন?

এই ভাষায় তো আমি প্রথম শব্দ বলেছিলাম,
তোমাকে বলেছিলাম “মা”—
তোমার মুখ থেকে শুনেছি প্রথম গল্প,
ভুল বানানে লিখেছি প্রথম চিঠি।

বাংলায় প্রেম করেছি,
বাংলায় কেঁদেছি,
আর বাংলাতেই জীবন সাজানোর স্বপ্ন দেখেছি।
এই ভাষাই তো আমার শ্বাস-প্রশ্বাস।

যারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছিল,
তারা কেবল বাংলা চায়নি—
তারা চেয়েছিল যেন আমরা নিজের পরিচয়ে কথা বলতে পারি,
নিজের ভাষায় মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারি।

তাদের সাহস ছিল,
আমাদের ভালোবাসা থাকবে না?
এই ভাষা যদি একদিন হারিয়ে যায়,
তাহলে আমরাও তো হারিয়ে যাবো।

প্রতিটি শব্দে, প্রতিটি উচ্চারণে
একটা আত্মার ছোঁয়া থাকে—
যেটা শুধু মাতৃভাষাই দিতে পারে।

ফেব্রুয়ারি একদিন নয়,
ভাষার জন্য ভালোবাসা সারাবছর।
এই ভাষা দিয়ে আমরা বই লিখি,
গান গাই, প্রতিবাদ করি, ভালোবাসি।

বাংলা শুধু আমার ভাষা নয়—
বাংলা আমার গর্ব, আমার শিকড়,
আমার অস্তিত্ব।
প্রয়োজনে আবারো জীবন দেব,
কিন্তু ভাষাকে মরতে দেব না।

খোঁকার স্বপ্নে আমি

খোঁকার স্বপ্নে আমি
   আরমান রশীদ 

খোকা ঘুমায় চুপটি করে,
মাথায় পড়ে চাঁদের আলো।
নরম হাতের চাপড় দিয়ে,
ডাকে যেন আপন ভালো।

ভোর হতেই চোখটা মেলে,
হাঁটে পা টিপে টিপে।
মা বলে সে হেসে হেসে,
দুনিয়াটা যেন রঙে রূপে।

ভাঙ্গা গলায় ডাকে সবাই,
বলে— "এই দাদা, ঐ মা!"
কথায় কথায় গড়ায় গল্প,
খেলনার সাথে খুশির থামা।

একঘর ভরে খোকার হাঁসি,
আকাশটাও নামে নেমে।
ছোট্ট হাতের ইশারাতে,
সবাই মিশে সেই ঘরে।

ওর কান্না নেই যে এখন,
হয়ে গেছে লক্ষ্মী ছেলে।
বিছানাতে গড়াগড়ি,
পুতুল খায় তারই চেলে।

মেঝে জুড়ে ছোট্ট পা,
হেঁটে বেড়ায় এই ঘরে।
একলা নয় সে কোনোদিন,
স্বপ্ন খোঁজে প্রতিক্ষণে।

ভাবি আমি থাকলে যদি,
খোকার মতো এখনো যেত!
ভয়-লজ্জা ছাড়িয়ে আবার,
মায়ের কোলে মুখটা পেত।

বৃষ্টি হলে নেমে গিয়ে,
কাদায় নাচতাম দুই পায়ে।
কার কী কথা, কে কী ভাবে—
সেসব থাকত দূর ছায়ায়।

আবার পেতাম সেই জীবন,
স্নেহ-ভরা নির্ভরতা।
খোকা যেন আজও দেখায়,
ভালোবাসার পূর্ণতা।

ডিজিটাল বাংলাদেশ

ডিজিটাল বাংলাদেশ
    আরমান রশীদ 

বাংলা আমার মাতৃভূমি, 
বাংলা মাতৃভাষা। 
বাংলা মাকে নিয়ে আছে,
হরেক রকম আশা।

আসিছে একুশ, 
দেখিবে মানুষ, 
গড়িব ডিজিটাল। 
দিচ্ছি কথা বাংলা মাকে -
পাল্টে যাবে হাল।

ছিলনা তখন অস্ত্রশস্ত্র, 
যুদ্ধের হাতিয়ার। 
মারলি তখন কত বাঙালি, ওহে হীন জানোয়ার।

পারলে আসিস দেখিয়ে দিব,
দুর্বল নাহি আর। 
করব খতম একে একে, 
তোরা পাবিনা কেহ ছাড়।

সবুজ, সোনালি, রোদেলা, রূপালী, 
রূপের ছিলনা শেষ। 
সেই বুকে তোরা করলি গুলি,
করে দিলি নিঃশেষ।

বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা,
দমে যাইনি তবু। 
বুকে ছিল বল সাহস অটল,
পিছু হাঁটেনি তবু। 
নয়মাস টানা যুদ্ধ শেষে,
আনল যে স্বাধীনতা। 
চলছে সময়, পাল্টে যাচ্ছে,
বাংলাদেশের হাল।

আসিছে একুশ, 
দেখিরে মানুষ, 
গড়িব ডিজিটাল। 
দিচ্ছি কথা বাংলা মাকে,
পাল্টে যাবে হাল।

স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে এবার,
ডিজিটাল বাংলার।

মায়া

মায়া
আরমান রশীদ 



তোমার চোখে প্রথম যে মায়াটা দেখেছিলাম,
সেদিন মনে হয়েছিল, এর আগে এমন কিছু কোনোদিনও দেখিনি।
চোখের ভেতর এক রকমের নরম আলো ছিল—
যেটা ঠিক রূপের ঝলক না, আবার চোখ ফিরিয়েও থাকা যায় না।

মনটা যেন চুপিচুপি তোমার দিকেই হেঁটে যাচ্ছিল।
তোমার হাসি... জানো?
ওটা যেন নীরব কোনো কবিতা।
কথা তেমন কিছু হয়নি,
তবু অদ্ভুতভাবে মনে হচ্ছিল—
তোমার পাশে একটা স্বপ্ন দাঁড়িয়ে আছে।

প্রকৃতি যেন তোমার ছোঁয়া পেয়েই জেগে উঠেছিল।
পাখির কণ্ঠে সুর, বাতাসে নরম ঘ্রাণ,
রোদে ছায়ায় খেলা— সবকিছুর মাঝেই তুমি ছিলে।

এই মায়াটা, যেটা কোনো শব্দে ধরা যায় না,
সে-ই আমাকে আজও থামিয়ে রাখে।
ভালোবাসা হয়তো সময়ের সঙ্গে বদলায়,
কিন্তু মায়া—
ওটা কখনো মলিন হয় না।

তোমাকে ভুলতে চেয়েছি... বারবার।
পারিনি।
তোমার মায়ার ছায়া আমার মনের দেয়ালে আঁকা।
ঘুমে, জেগে, নিঃশ্বাসে—
তুমি আছো।

তোমাকে ভালোবাসা নয়,
তোমাকে মায়া বলে ডাকতে ইচ্ছে করে।
কারণ মায়া…
সে তো শুধু ভালোবাসার চেয়ে গভীর নয়—
সে একটা অনুভব,
যার কোনো শেষ নেই।

শূন্যতার শহর

 শূন্যতার শহর

আরমান রশীদ


যে শহরে তোমার হাত ধরে ঘুরার কথা, 

সে শহরে কেবলই বিচ্ছেদের ব্যথা। 

যে শহরে তোমার চোখে চেয়েছিলাম, 

সে শহরে অশ্রুর বৃষ্টি পেয়েছিলাম।


যে রাস্তায় তোমার হাত ধরে হাঁটার কথা, 

সে রাস্তায় আজ কেবল ধুলোয় মাখা। 

যেখানে চুলের ঘ্রাণে হারাবো ভাবতাম, 

সেখানে নর্দমার গন্ধেই ডুবে যাই থমথম।


যে কফিশপে গল্প জমবে প্রাণে, 

আজ সেখানে নিঃসঙ্গতা হানে। 

চায়ের কাপে ঠোঁট ছোঁয়ালেও, 

তোমার হাসির উষ্ণতা পাই না তবু।


যে নদীর ধারে ঢেউ গুনবো বারে বারে, 

আজ সেখানে কেবল শূন্যতা জলে ঝরে। 

তোমার চোখের গভীরতা খুঁজে মরি, 

তবু স্রোতে ভেসে যায় স্মৃতির তরী।


যে বেঞ্চেতে বসবো পাশাপাশি, 

সে বেঞ্চে এখন কেবল ছায়া আমিষ। 

তোমার কোমল পরশ যে খুঁজি, 

কেবল হাহাকার পাখিদের সুরে বাজি।


যে সন্ধ্যায় কথা বলবে মধুর সুরে, 

সে সন্ধ্যায় আমি একা নিঃসঙ্গ দূরে। 

তবু শহরের বাতাসে খুঁজি তোমাকে, 

ভালোবাসার স্মৃতি আঁকি স্বপ্নের মাখামে।


শহর বদলায়, বদলায় সময়, 

তবু হৃদয়ে তুমি- রয়ে গেলে অমলিন, অক্ষয়।

রোদ বৃষ্টির খেলা

 রোদ বৃষ্টির খেলা

আরমান রশীদ 


দীর্ঘ দিনের রৌদ্র শেষে -

বৃষ্টি এলো বেলা শেষে, 

গাছ-পালা সব ফিরে পেল -

নতুন করে প্রাণ, 

কৃষকেরা ফসল ফলায় -

আনন্দে গায় গান।


আকাশ থেকে ঝরছে বারি -

মাঠে মাঠে বকের সারি, 

মাছ না পেয়ে কান্না করছে -

ক্ষেতের কচি বক।


একটু খানি বৃষ্টি শেষে -

রংধনু ঐ উঠেছে ভেসে, 

খোকারা সব খেলতে যাবে -

আম বাগানের মাঠে।


খেলা শেষে ফিরবে বাড়ি,

সবাই হেঁসে হেঁসে।